অনলাইন ডেস্কঃ বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে ‘৯৯৯’ এর জরুরি সেবা নেওয়ার জন্য কিছু বিষয় জেনে রাখা জরুরি। দেশের নাগরিকদের জরুরি সেবা প্রদানের উদ্দেশ্য যে কোন মোবাইল নাম্বার থেকে সম্পূর্ণ টোল ফ্রি কল করে বাংলাদেশের নাগরিকরা জরুরি মুহুর্তে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সেবা পেতে পারেন। এই নাম্বারে যোগাযোগের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা এ্যাম্বুলেন্স সেবাও তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়।
যে কোনো নাগরিক ৯৯৯ এ কল করার আগে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়।
ঠিকানা প্রদান: জরুরি সেবা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য হল সাহায্য প্রার্থীর লোকেশন বা ঠিকানা জানা। অপারেটকে (এজেন্ট) যতটা সম্ভব আপনার সঠিক অবস্থান বলুন, এক্ষেত্রে জেলা বা উপজেলার নামও বলতে হবে । আপনার সঠিক অবস্থান জানা না থাকলে পার্শ্ববর্তী বড় রাস্তা, বাজার বা হাইওয়ের নাম উল্লেখ করতে পারেন।
প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদান: আপনাকে সঠিক সেবা প্রদানের জন্য অপারেটর বা জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (এক্ষেত্রে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ) আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবেন যাতে তারা যথাযথ কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার প্রয়োজন জানাতে পারেন। অথবা আপনাকে জীবন রক্ষাকারী কিছু পরামর্শ বা করণীয় যেমন সম্পর্কে জানাতে পারেন। এ ধরণের প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদান করে অপারেটরকে সহায়তা করুন। অবশ্য আপনার প্রয়োজনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনাকে হয়তো একই প্রশ্নের উত্তর একাধিকবার দেয়া লাগতে পারে; বিশেষ করে ৯৯৯ থেকে কল ট্রান্সফার হয়ে পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিস বা হাসপাতালে পাঠানো হলে এমনটা হতে পারে।
ধৈর্য্যশীল থাকা: কলের সময় শান্ত থাকুন এবং আপনার সমস্যা বিস্তারিত তুলে ধরুন। অনেক সময় দেখা যায়, নাগরিক তার সমস্যার কথা জানাতে গিয়ে ভাবাবেগে আক্রান্ত হয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে থাকেন। এমনটা করা উচিত নয়। এর ফলে অপারেটরের মূল সমস্যাটা ধরতে ও প্রকৃত সাহায্য করতে অসুবিধা হয়। মনে রাখবেন, আপনি যত শান্ত থাকবেন, আপনি তত বিশদভাবে আপনার ঘটনার বর্ণনা দিতে পারবেন এবং অপারেটরও আপনাকে তত ভালভাবে সেবা প্রদান করতে পারবেন।
আপনার জরুরি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করুন: জরুরি পরিস্থিতি ব্যাখ্যার সময় কয়েকটি বিষয়ে সতর্কতার সাথে তথ্য দিন। আপনি নিজে নাকি আপনার কাছের কেউ সমস্যায় পড়েছেন? কিভাবে হল? আপনার কোন ধরনের জরুরি সেবা প্রয়োজন? এ্যাম্বুলেন্স? পুলিশ? নাকি অন্য জরুরি সেবা? কেউ আহত হলে তার পরিস্থিতি পরিষ্কারভাবে বলার চেষ্টা করুন; আহত ব্যক্তির অবস্থা কি খুবই আশঙ্কাজনক? তার জ্ঞান আছে কি? তিনি কি শ্বাস নিতে পারছেন? তার শরীর থেকে কি রক্ত বের হচ্ছে? আপনার সাধ্যমত রোগীর অবস্থা বলার চেষ্টা করুন, আপনার কথা বলতে অসুবিধা হলে পাশের কাউকে দিয়ে বলাতে পারেন, কল না কেটে লাইনে থাকুন।
আরও পড়ুন সরকারি দপ্তরের ওয়েবসাইট স্মার্ট বাংলাদেশে আনস্মার্ট
এ্যাম্বুলেন্স সেবা চাইতে এই বিষয়টি মনে রাখুন: ৯৯৯ সার্ভিসের মাধ্যমে যে এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয়, তা কিন্তু বিনামূল্যে নয়। বস্তুত বাংলাদেশের কোনো কর্তৃপক্ষই বিনামূল্যে এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদান করে না। আর ৯৯৯ যেভাবে কাজ করে, নাগরিকের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ফলে এ্যাম্বুলেন্সের ধরণ, গন্তব্যস্থল ইত্যাদি অনুযায়ী ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত হয়। তাই এ্যাম্বুলেন্স সেবা চাইতে এই সকল তথ্য অপারেটরকে সঠিক ভাবে প্রদান করুন। অপারেটর আপনাকে আপনার নিকটস্থ এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিবে।
ফায়ার সার্ভিসের সেবা চাইতে এই বিষয়টি মনে রাখুন: শুধুমাত্র অগ্নিদুর্ঘটনা নয়, ফায়ার সার্ভিস আরো নানা ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। যেমন সড়ক দুর্ঘটনা, নৌ দুর্ঘটনা, আটকে পড়া মানুষ বা পশু, পাখি উদ্ধার ইত্যাদি। ফলে এই ধরনের সেবার প্রয়োজন হলে ৯৯৯ এ ফোন করুন। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত সাহায্য পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে অপারেটরকে সহায়তা করুন। চলন্ত অবস্থায় এমন ঘটনা দেখলে নিশ্চিত হবার চেষ্টা করুন, আপনার ফোন করার পূর্বেই ফায়ার সার্ভিস বা পুলিশের কোনো ইউনিট সেখানে পৌঁছেছে কী না?
পুলিশের সেবা চাইতে এই বিষয়টি মনে রাখুন: জরুরি পুলিশী সেবার ক্ষেত্রে ৯৯৯ অপারেটর আপনাকে নিকটস্থ থানার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবে। আপনি সেখানে আপনার অভিযোগটি জানাতে পারবেন। যেহেতু রেফারেন্সের জন্য ৯৯৯ এ কল রেকর্ড করা হয়ে থাকে, তাই পুলিশের সাথে কথা বলার জন্য সঠিক তথ্য প্রদান করুন। শত্রুতাবশত কাউকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে ৯৯৯ এ ফোন করলে আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে । পুলিশী সাহায্যের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই নিকটস্থ থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে হয়। কারণ লিখিত অভিযোগ ছাড়া অনেকেক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত শুরু করতে পারে না। ৯৯৯ এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে আপনার করনীয় সম্পর্কে জেনে নিন।
অপরাধীর বর্ণনা দিন: আপনি যদি কোনো অপরাধ ঘটতে দেখেন তাহলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে পৌঁছান। যতদ্রুত সম্ভব ৯৯৯ এ কল করুন। আপনি অপরাধীকে চিনে থাকলে তা জানান কিংবা কাউকে সন্দেহ করেন কিনা তাও জানান। অপরাধীর হাতে অস্ত্র ছিল কিনা জানান। অপরাধী দেখতে কেমন? তার ধর্ম? আনুমানিক বয়স, উচ্চতা, ওজন, কাপড়ের রঙ প্রভৃতি তথ্য দিন। অপরাধী এখন কোথায়? তারা কি পালিয়েছে? কোন দিকে গেছে? তাদের সাথে কোন গাড়ি ছিল কিনা? কি গাড়ি? গাড়ির মডেল, রঙ এবং গাড়ির সাইজ কতটুকু? এমনকি গাড়ির নাম্বারের অংশবিশেষ প্রভৃতি তথ্য দিন।
ফোন খোলা রাখুন: আপনি যদি কোনো মোবাইল ফোন থেকে কল করে থাকেন তাহলে আপনার নাম্বারটি খোলা রাখুন, যাতে অপারেটর যেকোন মুহুর্তে আপনার সাথে পুনরায় যোগাযোগ করতে পারে। এর বাইরে আপনার চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বা এ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষও আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
সচেতনতা তৈরি করুন: ৯৯৯ ইমাজেন্সি সার্ভিসে বিনা কারণে প্রতিদিন প্রচুর শিশু ফোন করে থাকে। এর ফলে প্রকৃত বিপদগ্রস্থরা ক্ষতিগ্রস্থ হন। সময় ও সুযোগ করে আপনার সন্তানদের শেখান কেন, কখন ৯৯৯ এ ফোন করতে হবে। কখন ফোন করবে না সেটিও শেখান।
প্রতিটি কলই গুরুত্বপুর্ণ: প্রতিটি কলই গুরুত্বপূর্ণ সেটা ফলস কলই হোক আর প্রাঙ্ক কল হোক। যদিও এসব কল প্রকৃত জরুরি সেবা প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে। ভুয়া কলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে এবং আপনার নম্বরটি ব্লক করে দেওয়া হবে। আপনার অসতর্কতার কারণে যাতে ৯৯৯ কল না যায় সেজন্য আপনার মোবাইলটি লক করে রাখুন।
আপনার জরুরি সেবার প্রয়োজনে অপারেটররা অপেক্ষা করছে। ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
তথ্যসূত্র: ডিএমপি নিউজ
Leave a Reply